আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম :
প্রায় ছয় মাস ধরে ভারতের হাজতে বন্দি রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার সাতজন জেলে। এত দিনেও তাদের ফেরাতে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অবসরহীন দিন পার করছে এসব জেলেদের পরিবার। কর্মক্ষম মানুষ না থাকায় পরিবারগুলো পড়েছে অভাব-অনটনে।
আটক সাতজন হলেন চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের হরিনেরবন্দ এলাকার রাসেল মিয়া (৩৫), ব্যাপারী পাড়ার বিপ্লব মিয়া (৪৫), মীর জাহান আলী (৪৫), বকুল মিয়া (৩২), আমির আলী (৩৫), রাজিবপুর উপজেলার আঙ্গুর হোসেন (২০), রৌমারী উপজেলার চাঁন মিয়া (৬০)। আটকদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা একদিকে দুশ্চিন্তায়, অন্যদিকে চরম অভাবে দিন কাটাচ্ছেন। সচেতন মহল বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে জেলেদের ফেরানো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, চলতি মাসেই তাদের ছাড়ানো না গেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘ মেয়াদি সাজা হতে পারে। গত বছরের ৪ নভেম্বর রাজীবপুর উপজেলার জিঞ্জিরাম নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ভুল করে ভারতের সীমানায় প্রবেশ করেন তারা। পরে বিএসএফ তাদের আটক করে। এরপর তাদের ভারতীয় পুলিশের মাধ্যমে হাজতে পাঠানো হয়। পরিবারের লোকজন প্রথমে তাদের খোঁজ পাচ্ছিল না। সম্প্রতি ভারতের তুরা মেঘালয় থানা এলাকার এক বাসিন্দার মাধ্যমে গোপনে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে খবর পান পরিবারগুলো।
রমনা মডেল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুকুনুজ্জামান স্বপন বলেন, ‘যারা আটক হয়েছেন তারা নিয়মিত মাছ ধরতেন। মাঝে মাঝে ভারতের দিকে গিয়েও মাছ ধরতেন। এবার আর ফিরে আসেননি। পরিবারগুলো এখন অভাবে আছে।’ মীর জাহানের স্ত্রী ববিতা বেগম বলেন, ‘ঘরে খাবার ছিল না। স্বামী বলল, মাছ ধরে আসি। তারপর আর কোনো খোঁজ নেই। এখন সংসার চালাতে পারছি না।’ কাজলী বেগম বলেন, ‘নদীতে মাছ ধরে বেঁচে থাকতাম। ওরা প্রতিবছর ভারতের দিকে গিয়ে মাছ ধরে ফিরত। এবার আটক হয়ে গেছে। এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যায়।’
পরিবারগুলো জানায়, তারা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আশ্বাস পেলেও এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
রমনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আঁকা বলেন, ‘আটকদের ফিরিয়ে আনতে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করছি। চেষ্টা চলছে।’
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক বলেন, ‘বিষয়টি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুইবার জানানো হয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
মন্তব্য করুন