শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সোমেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে
তোলা বালু জব্দ ও নিলামে বিক্রির পর সেই বালু অপসারণে অযাচিত সময় বৃদ্ধির
অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবেরের বিরুদ্ধে। এ
সুযোগে নিলামের বালু বিক্রি না করে আবারও নদী থেকে বালু তুলে বৈধ নিলামের
কাগজ দিয়ে অবৈধ বালু বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নিলামের বালুতে হাত দিতে হচ্ছে না।
প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে বালু বিক্রি হলেও কমছে না নিলামে কিনে নেওয়া সেই বালু।
সচেতন মহল ও স্থানীয়রা বলছেন, চতুরতার সাথে জব্দকৃত বালু সরানোর সময় বৃদ্ধি করে
নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এতে হুমকির
মুখে পড়েছে সীমান্তবর্তী বালিজুড়ী, রাঙাজান ও খাড়ামোড়া এলাকার সোমেশ্বরী
নদীর আশপাশের এলাকা।
জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলায় সরকারের পক্ষ থেকে কোন নদীতেই বৈধ বালু মহালের ইজারা
দেওয়া হয়নি। গত ৩ ফেব্রæয়ারি উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে বালিজুড়ী বাজার
সংলগ্ন বালিজুরী-ভায়াডাঙ্গা রোড, বালিজুরী-কামালপুর রোড ও বালিজুড়ী হাই স্কুল
রোড-এ তিনটি স্থানে অবৈধভাবে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ বালু জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদের হলরুমে গত ২ মার্চ জব্দকৃত ওই বালুর নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।
নিলামে ৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫০ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন উপজেলা
বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিম দুলাল। পরে তিনি তৃতীয় পক্ষের কাছে ২৪ লাখ টাকায় ওই
বালু বিক্রি করে দেন। গত ৫ মার্চ দুলালের নামে বালু অপসারণের কার্যাদেশ দেয়া হয়।
শ্রীবরদীর ইউএনও সাক্ষরিত ওই কার্যাদেশে বলা হয়, এই আদেশে পত্র প্রাপ্তির পরবর্তী
সাত দিন অর্থাৎ ১২ মার্চ তারিখের মধ্যে জায়গাগুলো থেকে রক্ষিত বালু অপসারণ করতে
হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বালু অপসারণ করতে না পারলে পুনরায়
মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ওইসব বালু জব্দ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু গত ৯ মার্চ একটি নিলামগ্রহীতার সাক্ষরিত একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯
মার্চ পর্যন্ত বালু অপসারণের সময় বৃদ্ধি করেন ইউএনও। কিন্তু ১২ মার্চ সময় বৃদ্ধি না
করতে আরেকটি লিখিত আবেদন করেন নিলামগ্রহীতা আব্দুর রহিম দুলাল। তবে অদ্যাবধি
পর্যন্ত এই আবেদনের কোন সুরাহা করা হয়নি।
নিলাম গ্রহীতা আব্দুর রহিম দুলাল ইউএনও বরাবর নিলামে ক্রয়কৃত বালুর বিক্রির মেয়াদ
বৃদ্ধি না করার আবেদনে উল্লেখ করেন, আমার ক্রয়কৃত বালু ১২ মার্চ পর্যন্ত মোট ৭
দিন সময় ছিলো। ইতোমধ্যে আমি নিলামে ক্রয়কৃত বিক্রির মাধ্যমে অপসারণ করে
ফেলেছি। কিন্তু লোকমুখে শুনতে পাচ্ছি একটি অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী আমার
নাম ব্যবহার করে অবৈধ মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। তবে পরবর্তীতে তার সাথে কথা হলে
তিনি বলেন,
এদিকে সরেজমিনে বালিজুড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বালিজুরী-কামালপুর রোড ও
বালিজুরী হাই স্কুল রোডে বালুর বিশাল স্তুপ। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এগুলোই জব্দকৃত
ও নিলামে বিক্রির বালু। এই বালু নিলামে ডেকে নিয়ে বিক্রি না করে নদী থেকে আবারও
অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শ্রীবরদীর ইউএনও শেখ জাবেরের সাথে মোবাইলে বার বার
যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রশাসন অবৈধ বালু
উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কোন
ছাড় নেই। এর সাথে যারাই জড়িত তারা তাদের কর্মফল ভোগ করবে। আর শ্রীবরদীর
জব্দকৃত বালুর নিলাম ও অপসারণ নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সেটি আমরা খতিয়ে
দেখছি।
© All rights reserved © 2012- 2024
<a href=”https://www.allbanglanewspaperbd.com/“>All Bangla Newspaper</a>
মন্তব্য করুন