নিজস্ব প্রতিবেদক : কুমিল্লার তিতাসে মঞ্জুরা বেগম (৬০) নামে এক গৃহিণীর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার সাতানী ইউনিয়নের কালিরবাজার সংলগ্ন কৃষ্ণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মঞ্জুরা বেগম ওই গ্রামের শান্তি মিয়ার স্ত্রী ও দ্বিতীয় সাতানী গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার মেয়ে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও এলাকায় ভাইরাল হয়েছে প্রতিবেশীর কাছে থেকে কোরবানির ভাগের গোস্ত আনার জেরে মা’কে লাত্থি মেরে ও চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বড় ছেলে নবীর হোসেন। তবে পুলিশ বলছে নিহতের শরীরে তেমন কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যেহেতু বিতর্ক হচ্ছে তাই বুধবার সকালে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মঞ্জুরা বেগম ও শান্তি মিয়ার সংসারে ২ছেলে ও ৩মেয়ে রয়েছে। এদের মধ্যে সবার বড় ছেলে নবীর হোসেন বাড়ীতে বাবা-মা’র কাছ থেকে আলাদা থাকে। ঈদের দিন প্রতিবেশী স্বজনদের বাড়ি থেকে কোরবানীর গোস্ত আনায় রাতে এ নিয়ে মা ও ছেলে নবীর হোসেনের মধ্যে তর্ক হয়। এক পর্যায়ে চেয়ার দিয়ে আঘাত করলে মঞ্জুরা বেগম মাটিতে লুটিয়ে পরে। এসময় পিতা শান্তি মিয়া বাধা দিতে গেলে তাকেও গলা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে মাটিতে পরে থাকা মা অভিশাপ দিতে থাকলে, তলপেটে সজোরে লাত্থি মারে ছেলে নবীর হোসেন। এরপরই মঞ্জুরা বেগম অসুস্থ হয়ে পরে এবং তাকে উদ্ধার করে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর থেকেই পাষন্ড ছেলে নবীর হোসেন পলাতক রয়েছে বলে জানায় স্বজনরা।
এদিকে থানা পুলিশ ঘটনা জানলেও তেমন কোন ভূমিকা ছিলো না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। রাতভর ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে স্ট্রোক করে মৃত্যু হয়েছে বলে একটা শ্রেণী দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে পাষন্ড ছেলের শ্বশুরবাড়ীর লোকজন। অন্য দিকে গৃহিনীর এমন মৃত্যুর খবরে এলাকাসহ সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে এবং বিতর্কিত মন্তব্য ও ঘৃণা জানিয়ে বিচার দাবি করেন সুশিল সমাজের মানুষ।
পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।
নিহত মঞ্জুরা বেগমের মেঝো মেয়ে সাফিয়া বেগমসহ পরিবারের লোকজন জানায়, আমার মাকে হত্যা করেছে এটা ই সত্য। আমরা এ হত্যার বিচার চাই। আমরা আজকে (বৃহস্পতিবার) থানায় লিখিত অভিযোগ দিমু। পুলিশ মামলা না নিলে আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে বিচার প্রার্থী হইমু।
এলাকাবাসী জানায়, নবীর হোসেন অত্যান্ত খারাপ প্রকৃতির ছেলে। সে এর আগেও বহুবার তার মাকে মারধর ও বিশ্রি ভাষায় গাল মন্দ করেছে। গ্রাম পঞ্চায়েত কয়েকবার শালিশ করে সমাধানও দিয়েছে। এই হত্যার নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ কাঞ্চন কান্তি দাস এই প্রতিবেদককে জানান, মৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্ন মাধ্যমে বিতর্ক হওয়ায় আমরা লাশের ময়নাতদন্ত করেছি। তবে শরীরে তেমন কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যাবে মৃত্যুর কারন।
মন্তব্য করুন