মনিরুজ্জামান, এলেঙ্গা-টাঙ্গাইল : যমুনার টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরপৌলিতে বন্যা শুরু হওয়ার আগেই অসময়ে ১৬২৫ মিটার এলাকায় তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। অসময়ের নদী ভাঙনে স্থানীয় ৩৫ পরিবারের সকলেই শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে গিয়েছেন। বাড়ি ঘর হারিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে কেউ অন্যের জমিতে ও বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। নদী ভাঙন কবলিতরা সরকারি-বেসরকারি সাহায্য নয়- তারা যমুনার ওই অংশে বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনার বামতীরে কালিহাতী উপজেলার গড়িলাবাড়ী পাথরঘাট থেকে আলীপুর পর্যন্ত ব্লক দিয়ে বেরীবাঁধ নির্মাণ ও নিউ ধলেশ্বরীর নদীর অফটেক(মুখ) বাঁধাই করা হয়েছে। অপরদিকে, নাগরপুর উপজেলা থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরপৌলির দক্ষিণ পর্যন্ত জিওব্যাগ ও ব্লক ফেলে স্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়েছে। মাঝখানে চরপৌলি গ্রামের ১৬২৫ মিটার অংশ অরক্ষিত রয়েছে। বাঁধ না থাকায় ওই অংশেই অসময়ে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, গত মঙ্গলবার (৪ জুন) অরক্ষিত অংশে আকস্মিকভাবে ভাঙন শুরু হয়। এতে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৩৫টি পরিবারের আসবাবপত্রসহ ঘরবাড়ি ও গাছপালা যমুনায় বিলীন হয়ে যায়।
অসময়ের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত শ্রমিক আব্দুল কাদের জিলানি জানান, গত তিন দশকে চার বার তিনি বাপ-দাদার ভিটে হারিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকালে আকস্মিক ভাঙনে তাদের ৬০ শতাংশের বাড়ি যমুনার করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যায়। সহায়-সম্বল হারিয়ে তিনি রাক্ষুসে যমুনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় দেখতে পাচ্ছেন না। আবাসস্থল ছাড়া কিভাবে নিজের দুই ছেলে ও এক মেয়েকে মানুষ করবেন- তা নিয়ে ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় আছেন।
স্থানীয় বৃদ্ধা লালবানু বেগম জানান, রাক্ষুসী যমুনার আগ্রাসী ভাঙনে বাড়িঘর টানতে টানতে তার জীবন প্রায় শেষ। মঙ্গলবার ভাঙনের পর দুই দিন যাবত বাড়িঘরের আসবাবপত্র টানছেন। রান্না করার সুযোগ নেই- তাই ঠিক মতো খেতেও পারছেন না। ক্ষুধার যন্ত্রনায় ছোট ছোট নাতি-নাতনিরা কান্না করলেও তার কিছুই করার নেই।
গৃহবধূ হুনুফা বেগম জানান, মঙ্গলবার বিকালে চোখের সামনেই ঘরের টিন, চেয়ার টেবিল ও গাছপালা রক্ষুসী যমুনা গিলে খেয়ে ফেলল। কিছুই রক্ষা করতে পারেন নি। তিনি খাবার বা অনুদানের টাকা চান না- তারা ঘরবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ চান।
সামাজিক সেবা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বেলাল হোসেন জানান, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাঙন কবলিত এলাকার ঘর-বাড়ি উদ্ধারে সহযোগিতা করে থাকেন। মঙ্গলবার চোখের পলকে ৩৫টি পরিবারের ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেল- তা তারা রক্ষা করতে পারে নাই।
কাকুয়া ইউনিয়নের স্থানীয় সদস্য মো. নজরুল ইসলাম জানান, কাকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গত ৩০ বছর যাবত যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দীর্ঘ চরপৌলি গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা ভাঙনে যমুনার পেটে চােল গেছে। গত মঙ্গলবারের ভাঙনে ৩৫ পরিবারের প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি যমুনার বামতীরের অরক্ষিত ১৬২৫ মিটার অংশে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানান।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় জিও ব্যাগ ফেলে যমুনার বামতীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল সদরের চরপৌলী, কালিহাতীর ভৈরববাড়ী ও আলীপুর এলাকার অরক্ষিত ১৬২৫ মিটার বাঁধের কাজের জন্য নতুন প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। আগামি শুষ্ক মৌসুমে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. ছানোয়ার হোসেন এমপি জানান, বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আড়াইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌলির অরক্ষিত এলাকায় সিরাজগঞ্জের চায়না বাঁধের অনুকরণে নতুন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
মন্তব্য করুন