অনলাইন ডেস্ক: ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট’ ভাঙতে ১৫ দিন তরমুজ না কিনলে কমে যাবে ফলটির দাম। এই ভাবনা থেকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ফলটিকে বয়কটের ডাক দেন নাগরিকরা। এই বয়কটের দুই সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে তরমুজের দাম অর্ধেকেরও বেশি নিচে নেমে আসতে দেখা যায়। ফলে উৎসাহী নাগরিকরা এবার উচ্চ দামে বিক্রি হওয়া গরুর গোশত বয়কটেরও ডাক দিলেন।
শনিবার দুপুরের পর থেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গরুর গোশত বয়কটের ডাক দিচ্ছেন নেটিজেনরা। ফেসবুকের অন্য বন্ধুদের জানাচ্ছেন গরুর গোশত না কেনার আহ্বান। তাদের এই পোস্টগুলোর কমেন্ট বক্সে আবার অনেকেই একাত্মতা জানাচ্ছেন। তাদের ভাষ্য, ক্রেতা সচেতন হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রভাব অনেকটাই কমে যাবে তরমুজের মতো।
গরুর গোশত বয়কটের ডাক দিয়ে মিঠুন আহমেদ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘তরমুজের দাম বেড়েছিল। আমাদের আম জনতার বয়কটে এখন তরমুজের দাম হাতের নাগালে। এভাবে গরুর গোশতও খাওয়া বাদ দিন, বয়কট করুন। দেখবেন সেটাও হাতের নাগালে চলে আসবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘ক্রেতা না কিনলে দাম বাড়িয়ে কয়দিন কাটা গরুর গোশত রাখবে ফ্রিজে! কম দামে ক্রেতা না কিনলে কতদিন চড়া দাম হাঁকাবে। ক্রেতাই যদি না থাকে তাহলে কীসের সিন্ডিকেট। আমরা চাইলেই সব পারি। লাগবে শুধু একতা। চলেন, তরমুজের পরে এবার গরুর গোশতের দাম কমাই।’
মো. জামশেদুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, তরমুজের পর আরেকটি প্রতিরোধে অংশ নিন। ২য় পর্বে বয়কট গরু/মহিষের গোশত। আমরা ভোক্তারা প্রথমবার সফল হয়েছি, তরমুজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এখন থেকে ৭০০, ৮০০ টাকায় গোশত নয়। বয়কট গরু গোশত।
সাইফুল ইসলাম রিয়াদ নামের আরেক ব্যক্তি লিখেছেন, আমরা বাঙালিরা মনের চেয়ে জিহ্বার প্রাধান্যতা বেশি দিয়ে থাকি। যে কারণে কিছু অসৎ ব্যবসায়ীকে আমরা উচিত শিক্ষা দিতে পারি না। চলুন সবাই গরুর গোশত বয়কট করি। আওয়াজ উঠুক একসঙ্গে অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
আহমেদ আল আমিন নামে একজন লেখেছেন, প্রমাণিত হয়েছে পাঁচ শ টাকায়ও গরুর গোশত বিক্রি সম্ভব। তাই… এবার তবে চলো দোস্ত, বয়কট করি গরুর গোশত।
তবে কেউ কেউ আবার বলছেন, এভাবে গরুর গোশত বয়কটের ডাক দেওয়া কোনো সমাধান নয়। তরমুজ আর গরুর গোশত এক নয়।
শাহীন কাদির নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, এটা সম্ভব না। তরমুজ না খেলে তরমুজ পচে যায়। গরুর গোশত না খেলে গরু পচে যায় না। বরং বড় হবে আরও দাম বাড়বে। তরমুজ এককালীন ফল, আর গরু কিংবা যে কোনো হালাল মাংস বিয়ে-শাদি কিংবা আচার-অনুষ্ঠানে প্রয়োজন পড়ে। গরু বয়কট করার বিষয় নয়। বরং এটা আমাদের প্রয়োজন মেটায়, আসুন সঠিকটা জানি সঠিকটা বুঝি! সম্ভব হলে প্রত্যেকে নিজ নিজ সাধ্যমত একটি করে গরুর খামার তৈরি করি। ধন্যবাদ সকলকে। আল্লাহ সকলকে সঠিকটা বুঝার তৌফিক দান করুক আমিন।
গরুর গোশতের উচ্চ দাম নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই অসন্তোষ বিরাজ করছে। বছরখানেক ধরে ৭৫০-৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল গরুর গোশত, যা সমাজের সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এ অবস্থায় গত জানুয়ারিতে ৫৯০ টাকা কেজিতে গরুর গোশত বিক্রি করে আলোচনায় আসেন শাজাহানপুরের গোশত বিক্রেতা খলিল। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর অন্য ব্যবসায়ীদেরও এরকম দামে গরুর গোশত বিক্রির আহ্বান করলে এটা সম্ভব নয় বলে জানান তারা। এরই মাঝে বেশ কয়েকবার গোশতের দাম বাড়ান খলিল। সবশেষ রোজার শুরু থেকে ৫৯৫ টাকায় গোশত বিক্রি করছেন খলিল, যা ২০ রমজান পর্যন্ত চলবে।
এদিকে সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এক নির্দেশনায় গরুর গোশতের দাম খুচরা পর্যায়ে ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণ করে। তবে রাজধানীসহ দেশের কোথাও এই দামে গরুর গোশত মিলছে না। এমতাবস্থায় গরুর গোশত বয়কটের ডাক এলো।
মন্তব্য করুন