মাহাবুবুল হক :
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁরা জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে রেখেছেন সাহস, দক্ষতা, সততা ও মানবিকতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর। জনাব এম এ খালেক পিএসসি (আব্দুল খালেক) তেমনই একজন ব্যতিক্রমী মানুষ, যিনি একাধারে একজন দেশসেবক, প্রশাসক, রাজনীতিক ও সমাজসেবক।
✦ জন্ম ও পরিবার
১৯৪২ সালের ১৩ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দড়িকান্দি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে এক শিক্ষিত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এম এ খালেক। তাঁর পিতা মরহুম মৌলভী মোহাম্মদ উজির আহমেদ ছিলেন একজন সমাজগুরু ও শিক্ষক। মা আয়েশা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
✦ শিক্ষাজীবন
শিক্ষা জীবনে শুরু থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী ও মননশীল। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা শুরু করে তিনি পার্শ্ববর্তী ছলিমগঞ্জ আদর্শ রৌফ মুন্সী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর ১৯৬১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯৬৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন।
ছাত্রজীবনে তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি কবিতা, গল্প, নাটক, জীবনীগ্রন্থ, ইতিহাসসহ নানা বিষয়ের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখান।
✦ চাকরি জীবন: সাহসিকতা, সততা ও নেতৃত্বের প্রতীক
জনাব এম এ খালেক ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন গ্রহণ করেন এবং পরে বাংলাদেশ পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন।
তাঁর বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে তিনি ময়মনসিংহ, পাবনা, রাজশাহী ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, সৎ ও কর্তব্যপরায়ণ কর্মকর্তা।
১৯৮৯ সালে তিনি ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পান এবং খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের প্রথম ডিআইজি জোন চট্টগ্রামে তাঁর হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৯৪ সালে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি) পদে আসীন হন। এছাড়া তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি চাকরি জীবন থেকে অবসর নেন।
✦ রাজনৈতিক জীবন
চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা ও জনসেবার মানসিকতা থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-তে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। দলীয় নেতৃত্ব ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে দলীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। তিনি একসময় জাতীয় সংসদের সদস্য (এমপি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
দলীয় রাজনীতি ছাড়াও তিনি একটি অরাজনৈতিক জনসেবার ভাবধারায় কাজ করে যাচ্ছেন। এলাকার রাস্তা, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, খেলার মাঠ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সত্যিকারের সমাজসেবকের ভূমিকা রেখেছেন।
✦ ব্যক্তিজীবন ও জনপ্রিয়তা
জনাব এম এ খালেক ছিলেন সর্বদা সৎ, নিঃস্বার্থ, নীতিবান ও বিনয়ী মানুষ। তিনি নিজ এলাকার মানুষদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়, আস্থাভাজন ও নির্ভরযোগ্য নেতা। তাঁর কথা ও কাজের মধ্যে সবসময় ছিল শৃঙ্খলা, পরিকল্পনা ও জনগণের উন্নয়নের বাস্তব চিত্র।
জনগণ মনে করে, এমন একজন মানুষ, যিনি পুলিশ বাহিনী থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক স্তরে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনিই পারেন জাতির জন্য বড় কিছু করতে।
✦ জনাব এম এ খালেক পিএসসি (অবঃ) একজন আদর্শ নেতৃত্বের প্রতীক। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করে এবং রাজনীতির মাঠে থেকেও তিনি স্বচ্ছতা ও দেশপ্রেমের প্রতিচ্ছবি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরবাসী তাঁর মত সাহসী, অভিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল নেতাকে আবারও সংসদে দেখতে চায়।
🔹 সংবাদ প্রতিবেদক: (মাহাবুবুল হক)
🔹 তারিখ: ২৯ জুলাই ২০২৫
মন্তব্য করুন