মোঃ সুজন আহাম্মেদ
রাজশাহী
রাজশাহীর বাঘায় গত শনিবার আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এজাহার নামীয় ৪৬ জনসহ অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। বাঘা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু বাদি হয়ে দ্রুত বিচার আইনে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলীকে।
রোববার (২৩ জুন) বিকেলে মামলা রেকর্ডের, আগেরদিন শনিবার সকালে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা সাতজনকে রোববার বিকেল ৫টায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তাকৃতরা হলেন-বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম,খায়েরহাট গ্রামের বিশিষ্ট ঠিকাদার শাজামাল সরকার লিটন,কলিগ্রামের মারুফ হাসান, মিলিকবাঘা গ্রামের তরঙ্গ হোসেন, নাছির উদ্দিন,বানিয়াপাড়া গ্রামের মতিউর রহমান, চকছাতারি গ্রামের গোলাম মোস্তফা। তারা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানের সমর্থক বলে জানা গেছে।
এদিকে গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন। বাঘা পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মামুন হোসেন জানান, রোববার সকালে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আশরাফুল ইসলামের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। আশঙ্কা কেটে গেছে। আশরাফুল ইসলাম বাবুল, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও এমপি শাহ্রিয়ার আলমের পক্ষের বলে জানা গেছে।
জানা যায়, শনিবার সকাল ১০ টায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীর সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে বাঘা উপজেলা আওয়ামীলীগ। এতে অংশ নেন, আশরাফুল ইসলাম বাবুল, উপজেলা ভোটে পরাজিত প্রার্থী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি রোকনুজ্জামান,পৌর আ’লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকার,সাধারন সম্পাদক মামুন হোসেন,উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহিদ সাদিক কবীর,উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক শাহিনুর রহমানসহ তাদের সমর্থকরা।
একই দিন সকাল ১০টায় উপজেলা সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে, বাঘা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের কতিপয় ব্যক্তি দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতার কাছে জোর পূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সমর্থন জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন,পৌর মেয়র আক্কাছ আলী, পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ ইনু)’র কেন্দ্রীয় কার্যকরি কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি,দলিল লেখক জহুরুল ইসলামসহ তাদের সমর্থকরা।
দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে দেশীয় অস্ত্রসহ চাপাতি ও পাইপ, ইটপাটকেল নিয়ে বাঘা উপজেলা চত্বর এলাকায় সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। আহত হন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, বাঘা পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাছ আলী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ ইনু)’র কেন্দ্রীয় কার্যকরি কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, আড়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামসহ অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও রফিকুল ইসলামকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।স্থানীয়রা জানান,মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে পৌর মেয়রকে উদ্দেশ্য করে উস্কানীমূলক বক্তব্য দেওয়া হলে তার নের্তৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে।
এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকেই মেয়র আক্কাছ ও উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু সহ তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্নগোপনে রয়েছে। বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন,আহতের পক্ষের লোকজন চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত থাকায় মামলা রেকর্ডে বিলম্ব হয়েছে। তবে মামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন