আবদুল আহাদ হোসেন -
স্টাফ রিপোর্টার -
বহুল আলোচিত রাজধানীর ডেমরা এলাকার অসহায় কিশোরীকে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌনকর্মী হিসেবে দুবাইতে পাচার ও নির্যাতনে হত্যার ঘটনার প্রধান দুই আসামি ফারজানা (৩৫) এবং সোহাগী @ রিয়া (৩০)’কে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
গত ১৬ আগস্ট ২০২৩ তারিখ রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ভিকটিম জান্নাত আক্তার (১৭)’কে দুবাই প্রবাসী ফারজানা ও তার বোন সোহাগী মিলে দুবাইতে যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করে দেয়। পরবর্তীতে সেখানে অবস্থানকালীন ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ ভিকটিম জান্নাত এর মৃত্যু হয়। দুবাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ এম্বাসি হতে অন্য একজন দুবাই প্রবাসী বাঙালী ভিকটিম এর লাশ পরিবারের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য ২৪ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেন। এরই মাধ্যমে ২৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ জান্নাত এর পরিবার জানতে পারে যে, দুবাইতে জান্নাত এর মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে লাশ দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয় এবং জান্নাত এর পিতা জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে ২৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ বিজ্ঞ মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার ও হত্যার অভিযোগে একটি নালিশি মামলা করেন। উক্ত মামলায় ফারজানা ও সোহাগীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনকে আসামি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে নালিশি অভিযোগটি যাত্রাবাড়ী থানায় এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়; যার মামলা নম্বর-২০, তারিখ ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র্যাব উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
গত ২৩ মার্চ রাতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম জান্নাতকে যৌনকর্মী হিসেবে পাচার ও হত্যার ঘটনার প্রধান দুই আসামি ১। সোহাগী ওরফে রিয়া (৩০), স্বামী-আঃ হালিম, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা এবং তার দুবাই প্রবাসী বোন ২। ফারজানা (৩৫), দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম জান্নাত আক্তার (১৭) দীর্ঘদিন যাবৎ তার পরিবারের সাথে রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় আসামিদের পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করে আসছিল। জান্নাত এর পিতা জাহাঙ্গীর সিএনজি চালিত অটো রিকশা চালিয়ে এবং তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতো। এভাবে টানাপোড়েন এর সংসারে অর্থকষ্টে জর্জরিত থাকা অবস্থায় ভিকটিম জান্নাত’কে তাদের প্রতিবেশী সোহাগী ও তার দুবাই প্রবাসী বোন ফারজানা দুবাই নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রলোভন দেখাতে শুরু করে। দুবাই প্রবাসী ফারজানা ভিকটিমকে জানায় যে, তাকে দুবাই নিয়ে একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ পাইয়ে দিবে। যার মাধ্যমে অনেক ভালো বেতন এবং ভাতাসহ অন্যান্য অনেক সুবিধা পাবে যাতে করে জান্নাত এর পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে আসবে। দুবাই নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার খরচের কথা বলে ফারজানা ও সোহাগী জান্নাত এর পরিবারকে ০৩ লক্ষ টাকা যোগাড় করে দিতে বলে। বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম জান্নাত তার পরিবারের সাথে আলোচনা করে এবং লোনের মাধ্যমে ০৩ লক্ষ টাকা যোগাড় করে সোহাগীর হাতে তুলে দেয়।
পরবর্তীতে ফারজানার দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী সোহাগী তাদের চক্রের দালালের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের একটি ভুয়া ঠিকানা সম্বলিত পাসপোর্ট ও টুরিস্ট ভিসা প্রস্তুত করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট ২০২৩ তারিখ ভিকটিমকে তারা দুবাই প্রেরণ করে। দুবাই পৌঁছানোর ০২ দিন পর ভিকটিম তার পিতা জাহাঙ্গীরকে মোবাইলফোনের মাধ্যমে জানায় যে, আসামিরা দুবাইতে উচ্চ বেতনের চাকুরির মিথ্যা প্রলোভন ও আশ্বাস দিয়ে তাকে যৌনকর্মী হিসেবে পাচারপূর্বক বিক্রি করে দিয়েছে এবং সেখানে তাকে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। একপর্যায়ে নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ জান্নাত মৃত্যুবরণ করে। এরপর ভিকটিম এর সাথে তার পরিবার আর কোন যোগাযোগ করতে না পারায় তারা গ্রেফতারকৃত সোহাগীর দ্বারস্থ হয়। সোহাগী ও ফারজানা মিলে ভিকটিমের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতে থাকে এবং তাদেরকে জানায় যে, তাদের মেয়ে দুবাইতে খুব ভালো আছে, সময় পেলেই তাদের সাথে যোগাযোগ করবে।
পরবর্তীতে গত ২৪ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ দুবাই প্রবাসী এক বাংলাদেশী যুবক দুবাই এর বাংলাদেশ এম্বাসিতে ভিকটিম এর লাশ দেখতে পায় এবং তার পরিবারের নিকট লাশটি হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট এর তথ্য ও ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করে। বিষয়টি ২৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ জান্নাত এর পরিবার জানতে পারে এবং লাশ দেশে নিয়ে আসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে। এপ্রেক্ষিতে জান্নাত এর পিতা জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে বিজ্ঞ মানবপাচার দমন ও প্রতিরোধ আদালতের মাধ্যমে মামলা দায়ের করেন।
গ্রেফতারকৃত ফারজানা গত মার্চ ২০২৩ মাসে দুবাই গিয়েছিল এবং জান্নাত মারা যাওয়ার পর জানুয়ারি ২০২৪ মাসে দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরেই তার বোন সোহাগীকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত রাতে র্যাব-৩ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দলের হাতে তারা গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : এম এস প্লাজা, ২৮/১/বি, (৩য় তলা), টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।ফোন নাম্বার-+8809697648889/ +8809638548103 , ওয়েবসাইট : www.shirsoaparadh.com, Email:editor.dso@gmail.com, shirsoaparadhnews@gmail.com
স্বত্ব © ২০১২-২০২৪ দৈনিক শীর্ষ অপরাধ