রাজশাহী প্রতিনিধি : ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন। এতে দেশে থাকা হেভিওয়েট নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা কর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। যে সব নেতারা মানুষের প্রতি জুলুম নির্যাতন করেছেন তারা এখনো নিজেকে হাইড করে রেখেছেন। এদিকে অনিয়ম বিরোধী নেতারা ৫/৭দিন গা ঢাকা দেয়ার পর জনসম্মুখে ফিরতে শুরু করেছেন। রাজশাহী-১ গোদাগাড়ী-তানোরের সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এখন কোথায় আছেন সে বিষয়ে কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে আওয়ামীলীগ দলের কেউ কেউ বলছেন তিনি সেনা হেফাজতে আছেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ৫ আগষ্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে নৌকা যোগে পালানোর সময় এলাকাবাসীর হাতে ধরা খায়। এলোপাতাড়ী মারধরের মুহুর্তে পদ্মার ওপারে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি। জানা গেছে তিনিও দেশেই আছে। তার জিসান টাইল'স এর প্রতিষ্ঠানটি সেদিনই বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দীন সোহেল অভ্যুত্থানের পর একদিন অফিস করে তিনিও লাপাত্তা হয়েছেন বলে জানা যায়।
গোদাগাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও গোদাগাড়ী উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অয়েজ উদ্দীন বিশ্বাস ৫ আগষ্টের পর গা ঢাকা দিয়েছেন।যানা যায়নি তিনি কোথায় অবস্থান করছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন তিনি বাড়িতেই আছেন। বাড়ী থেকে বের হচ্ছেন না। ড্রেন, রাস্তা নির্মাণ ও পৌর ট্যাক্সকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে ।
গোদাগাড়ী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ ঘটনার পর অদৃশ্য হয়ে যান। কোথায় আছেন খোঁজ খোজ মেলেনি তার। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব, তিনিও অন্যান্যদের মত গা ঢাকা দিয়েছেন।
গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি রবিউল আলম, ঘটনার আগেই চিকিৎসার জন্য পার্শবর্তী দেশ ভারতে গেছেন। সাধারণ সম্পাদক নাসিমুল ইসলাম নাসিম কয়েকদিন গা ঢাকা দেওয়ার পর ডাইংপাড়ায় তার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানে মনোযোগী হয়েছেন ।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল সরকার ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া খাতুন মিলি তাদেরও কোন খোঁজ মেলেনি।
গোদাগাড়ী পৌর যুবলীগ সভাপতি অধ্যাপক আকবর আলীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।গা ঢাকা দিয়েছেন তিনিও। সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেকের ছেলে আব্দুল্লাহ দিনাজপুরে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।
এছাড়াও দলের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরও নেই কোন হদিস। জানা যায় উপজেলার প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার গভর্নীং বডি কমিটির সভাপতি/সেক্রেটারীর পদগুলো এখনো আ’লীগের দখলে।এছাড়াও হাট বাজার, রাস্তা ঘাট, বালুমহল, রেজিষ্ট্রি অফিস, ঘাট ইজারাসহ উচ্চ থেকে নিম্ন সকল স্থান আওয়ামীলীগ নেতাদের দখলে।
উপজেলায় দলীয় কোন বিক্ষোভ/ সমাবেশ হলে সমাবেশে এমপির উপস্থিতিতে প্রতিটি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, গণশিক্ষার সকল শিক্ষকদের আসা বাধ্যতামূলক করেছিলেন তিনি। অনুপস্থিত হলেই ঘটতো বিপত্তি। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এ আসনটিতে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন মর্মেও জানান একাধিক সূত্র। দলের কোন নেতা তার কথামত না চললেও চলত খড়গহস্ত। তার কথামত যেসব নেতা কাজ করতো তাদেরকে রাখা হত উচ্চমাকামে। আর যারা তার কথার বিরুদ্ধে চলত তাদেরকে ছুঁড়ে ফেলা হত কমিটির বাইরে। এসব কারণেই গোদাগাড়ী আ’লীগে সৃষ্টি হয় সেভেন স্টার। এছাড়াও অনেক বড় বড় নেতাকে ছুড়ে ফেলা হয় দলীয় সকল কার্যক্রম থেকে।
গোদাগাড়ীর যেসব নেতা এতদিন লুটেপুটে তছরুপ করেছেন তাদের দেখা যায় নি কাওকেই। সকলেই গা ঢাকা দিয়ে ফেসবুকে সক্রীয় হয়েছেন।
অপর দিকে রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও গোদাগাড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক আলমগীর কবির তোতাকেও দেখা যাচ্ছে না। সচতন মহল বলছেন তোতার সাংবাদিকতা করার কোন যোগ্যতা নেই।প্রাথমিকের গন্ডি না পেরিয়েই সে কিভাবে সাংবাদিকতা করে? সাংবাদিকতা এবং আওয়ামী লীগের পদ ব্যবহার করে সে নিয়োগ বানিজ্য, পুলিশের সাথে সখ্যতা রেখে গ্রেফতার বানিজ্য এবং বিচারের নামে অবিচার করে পক্ষের কাছে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। রাজশাহীতে গড়েছেন বাড়ী। সেই সুত্রেই তার জুলুমের শিকার হাজারও বিক্ষুব্ধ জনতা তার টাকা সংগ্রহের চেম্বারটিও আগুণ লাগিয়ে দেয়।
আরেক পৌর আ’লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, সাংবাদিক পরিচয়দাকারী ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামকে ৫ আগষ্ট আন্দোলনকারীরা গণধোলাই শেষে মারাত্মকভাবে আহত করে। শহিদুল বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনিও থানার দালাল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। পুলিশের সাথে গ্রেফতার বানিজ্য, পক্ষপাতিত্ব বিচার করে কামিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। সাংবাদিকতার নাম ব্যবহার করে করতেন থানার দালালী। কোথাও কোন আসামি ধরা পড়লেই ডাকা হতো শহিদুলকে।তাকে দিয়ে করানো হতো টাকার চুক্তি। এছাড়াও কাউন্সিলর হিসেবে নাগরিকদের ভাতা দেওয়ার নামেও তুলেছেন লক্ষাধিক টাকা। বয়স্ক ভাতাভোগী বদিউজ্জামান
( বদ্দী) বলেন, আমার ও আমার স্ত্রীর ভাতা করে দেওয়ার কথা বলে সাত হাজার টাকা নিয়েছে।প্রতিবেশীদের আরও প্রায় ২০ জনের কাছে ১৫০০০০/- টাকা হাতিয়েছেন তিনি।
পত্রিকার হকার এবং সাংবাদিক পরিচয়বহনকারী সোর্স পিচ্চি মুক্তার হোসেনকেও আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিলে দ্রুত সটকে পড়ে প্রাণে রক্ষা পায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সরমংলা এলাকার শামসুলের ছেলে সোহেল জানান, শহিদুল বিচারের নামে আমার কাছে ৫০০০০/- টাকা চাই।আমি দিতে অস্বীকার করলে থানার যোগসাজশে আমাকে মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়।আমি গত ৪ জুন থেকে ৫২ দিন জেল হাজতে ছিলাম।আমাকে অন্যায়ভাবে যে মামলা দেওয়া হয়েছিল তার বিচার চাই।
মেডিকেল পূর্বপাড়ার হাকিম জানান,আমাকে কিছুদিন আগে অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তার করে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। সেখানে শহিদুল এসে আমার কাছে ৭০০০০/- টাকা চাই।আমি মামলা থেকে বাঁচতে ২০০০০/- টাকা দেয়।আরও ৫০০০০/- টাকার জন্য চাপ দেয় শহিদুল। পরে অন্য সাংবাদিকদের স্বরনাপন্ন হয়ে আমি রক্ষা পাই।তিনি আরও বলেন,আমাকে ছাড়াও শহিদুল অনেকের কাছ থেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছেন।
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : এম এস প্লাজা, ২৮/১/বি, (৩য় তলা), টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।ফোন নাম্বার-+8809697648889/ +8809638548103 , ওয়েবসাইট : www.shirsoaparadh.com, Email:editor.dso@gmail.com, shirsoaparadhnews@gmail.com
স্বত্ব © ২০১২-২০২৪ দৈনিক শীর্ষ অপরাধ