মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা বিজলী বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ফাতেমা বেগমের বিরুদ্ধে ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে দীর্ঘ ১৮ বছর শিক্ষকতা করার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতার স্ত্রী পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে এ অনিয়ম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি একটি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে ২০০৮ সালে তিনি উক্ত বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। অভিযোগ রয়েছে, ওই সনদ দেখিয়ে তিনি এমপিওভুক্ত হন এবং এখন পর্যন্ত সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন। ২০২০ সাল থেকে তিনি উচ্চতর স্কেলভুক্ত বেতনও গ্রহণ করছেন।
ফাতেমা বেগম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বদলগাছী উপজেলা শাখার সভাপতি আবু খালেদ বুলুর স্ত্রী। এ বিষয়ে সম্প্রতি সবুজ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তার সকল সনদের কপি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগসূত্রে আরও জানা গেছে, ফাতেমা বেগমের উপস্থাপিত নিবন্ধন সনদে রোল নম্বর ২১০১০১১৭ ও নিবন্ধন নম্বর ৬১০৪২২৮ থাকলেও জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (NTRCA) ওয়েবসাইটে উক্ত তথ্য যাচাই করে সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এতে করে সনদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক ফাতেমা বেগম বলেন, “আপনাকে কেনো আমি তথ্য দেবো? আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে আমি তাদের কাছে দাখিল করবো।” প্রধান শিক্ষকও শিক্ষিকার সনদে কোনো সমস্যা রয়েছে বলে স্বীকার করেননি এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। প্রমাণ মিললে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়ভাবে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে কীভাবে এমন অনিয়ম অব্যাহত থাকলো, আর শিক্ষা ব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এতোদিন কী করছিল?
মন্তব্য করুন