সামিমা আক্তার:
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন ৬৩ নং ওয়ার্ড মাতুয়াইল উত্তর পাড়ার ব্যবসায়ী মোসলেহ উদ্দিন এর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে ছাত্রের বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলে ছাত্রটি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার পর ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোসলেহ উদ্দিন এর কাছে কিছুদিন পূর্বে অপরিচিত এই নাম্বার-০১৭৬৩৮৫৪৯৩৫-থেকে একটি ফোন আসে। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপ এ বিকাশ নাম্বার দিয়ে টাকা এবং একটি মোটরসাইকেল দাবি করা হয়, দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পাওয়ার কারণে ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয় যার নং ২৮, ধারা-১৪৩/১৪৭/৩০৭/৩২৬/১০৯/১১৪- মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বিবাদী-১১ নং আসামী ৬৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের ক্যাডার। অনুসন্ধানে জানা যায়, মোসলেহ উদ্দিননের সাথে রাজনীতির কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তিবর্গ জানান মোসলেহ উদ্দিনের সাথে ছাত্র জীবন থেকে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। তবে উনি কোনদিন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হননি তাঁর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা হয়েছে এতে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোসলেহ উদ্দিন দৈনিক শীর্ষ অপরাধ কে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে গরুর খামার ও মাছের ব্যবসা করি এবং মিনি কক্সবাজার নামে একটি শিশুদের বিনোদন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইট বালুর শহরে এলাকার শিশুদের জন্য খেলাধুলার একটি প্রতিষ্ঠান করেছি। স্বৈরাচার হাসিনার আমলে আমার গরুর খামার থেকে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা গরু নিয়ে গেছে এবং আমার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। আমার জীবনে কোনদিন রাজনীতির সাথে আমি সম্পৃক্ত হইনি, এলাকার একটি কচুক্রী মহল আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করার জন্য আমার বিরুদ্ধে রাজনীতিমূলক একটি মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে আমার মোবাইল নাম্বারে ফোন আসে হোয়াটসঅ্যাপে ওই ব্যক্তি ফোন দিয়ে আমাকে বলে বিকাশে টাকা দেওয়ার জন্য আরেকটি মোটরসাইকেল দেওয়ার জন্য না দিলে মামলা হবে। বিষয়টি আমি এড়িয়ে গেলে আমার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয় যাহার নং ২৮। তিনি আরো জনান, আমার একমাত্র ছেলে মো. জিতুল চৌধুরী, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হয়। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। যেভাবে আমার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে আসলে বিষয়টি দুঃখজনক। আমার ছেলে আন্দোলনে আহত হয় আমি পিতা হয়ে মিথ্যা মামলা ভোগ করছি। এ বিষয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. জিতুল চৌধুরী দৈনিক অপরাধ কে বলেন, আমার পিতা-মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা হয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে আমি নিজে আহত হয়েছি এবং আমার সাথে আমার একাধিক ফ্রেন্ড পুলিশের গুলিতে আহত ও নিহত হন। দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বাধীন করলাম আমরা আর আমার বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয় বিষয়টি দুঃখজনক। আমি-সহ আরো তিনজন নুর, তারেক এবং শহীদ জিহাদ আমরা ডিএমআরসি’র প্রধান নেতৃত্বে ছিলাম। আমাদের নেতৃত্বে ডিএমআরসি’র সকল ভাই-বোনেরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। আমরাই প্রথম শনির আখড়া-কাজলা রোড ব্লক করে দেই। ১৮ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগদের সাথে সংঘর্ষে অনেক ছাত্র-ছাত্রী নিহত হয়। তবুও আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের প্রিয় ভাই শহীদ জিহাদ মাথায় পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ৫ই আগস্ট এবং আমি-সহ আমার বন্ধুরা সংঘর্ষের মাধ্যমে ব্যাপক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। এ আন্দোলন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দালালরা আমার ফোন নিয়ে নেয় এবং আমাকে মারার হুমকি দেওয়া হয়। তবুও আমি থেমে থাকিনি আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি এবং দেশ স্বাধীন করেছি দ্বিতীয়বার। আমি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন দেখিনি ২৪ এর আন্দোলন দেখেছি। আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি রক্তের বিনিময় তবুও এই দেশে আমার পরিবার হয়রানি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়েছে আমার পরিবার। তিনি বলেন, আমার বাবা একজন ব্যবসায়ীক। তার একটি গরুর খামার এবং একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য। শত্রুতার মাধ্যমে আমার বাবার কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে একটি মোটরসাইকেল এবং টাকা চেয়েছিল যদি সে না দেয় তাহলে তার নামে মিথ্যে মামলা দেওয়া হবে। আমার বাবা কখনো রাজনীতিতে ছিল না। আমি একজন ছাত্র আমি জানি কোনটা ন্যয় কোনটা অন্যায়। আমার বাবা আওয়ামী লীগের এই নোংরা রাজনীতির সাথে কখনো জড়িত ছিলেন না। তিনি একজন বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক তিনি প্রতিনিয়ত হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। তাকে আওয়ামী লীগের সদস্য বানিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িত করেছে। আমরা করলাম দেশ স্বাধীন আমরাই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছি না। তিনি জানান আমার বাবার থেকে আওয়ামী লীগের দালালরা প্রতিমাসে ব্যাপক পরিমাণ চাঁদা তুলেছে জোর করে গরু কেড়ে নিয়েছে যখন মন চেয়েছে তখন মাছ নিয়েছে। আমার বাবা কিছুই বলেনি তিনি আমরা যে হয়রানির ভিতরে আছি বিষয়টা খুবই দুঃখজনক কারণ আমি একজন ছাত্র হয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে মাথায় ব্যাপক পরিমাণ আঘাত পেয়েছি ১৫ টা সেলাই হয়েছে তাতে আমার কোন আফসোস নেই। আমার একটাই আফসোস আমার বাবার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে আমি একজন ছাত্র হিসেবে তার বিচার চাই। আমার বাবার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে সঠিক বিচার চাই এবং যারা হয়রানি করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। এদিকে যাত্রাবাড়ী থানার মামলার বাদী-বেল্লাল পিতা-রমজান আলী ফকির, সাং- গ্রাম : বাছুয়া কবিরপুর, ডাকঘর-রহিমগঞ্জ থানা-ফুলপুর জেলা ময়মনসিংহ। বর্তমানে-মিয়া বাড়ি হাশেম রোড মাতুয়াইল, থানা যাত্রাবাড়ী-মামলার বাদী-বেল্লালকে একাধিক বার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ৬৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল ভূঁইয়া (তুহিন) দৈনিক শীর্ষ অপরাধ কে জানান, আমি বিএনপি’র রাজনীতি করি কিন্তু আমি কখনোই দেখিনি মোসলেহ উদ্দিনকে কোন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে তিনি একজন ব্যবসায়ীক। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে যে কাজটি হয়েছে, আমার মনে হয় বাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা উচিত বা মানহানি মামলা করা উচিত বিদায় আমাদের বর্তমান দেশে যে পরিস্থিতি যেটা করছে খুবই দুঃখ জনক আমি এই মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছালেহ’এর সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য করুন