মো. গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহী জেলায় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষার বড় সংকট তৈরি হয়েছে। জেলার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই। শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মোট ১ হাজার ৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে ৩৮৯টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৬১টি বিদ্যালয়ের পদ মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে আছে।
কোন উপজেলায় কত পদ শূন্য
সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে বাগমারা উপজেলায়, যেখানে ৯৭টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এরপর গোদাগাড়ীতে ৭১টি, তানোরে ৬২টি, চারঘাটে ৩৮টি, পুঠিয়ায় ২৭টি, বাঘায় ২২টি, পবায় ২১টি, দুর্গাপুরে ২১টি, মোহনপুরে ২০টি এবং মহানগরের বোয়ালিয়া এলাকায় ১০টি বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকশূন্য অবস্থায় রয়েছে।
সহকারী শিক্ষকদের বাড়তি চাপ
এ অবস্থায় সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু পূর্ণ ক্ষমতা না থাকায় প্রশাসনিক নানা কাজে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
পবা উপজেলার ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নফুরা খাতুন বলেন,
“প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে মিড-ডে মিল, সরকারি ডেটা আপলোড, সভা, অভিভাবক সংযোগ—সব কিছু সামলাতে হচ্ছে। ফলে পাঠদানে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।”
কালুপাড়া মাধাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুমা আক্তারও জানান, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করলেও প্রশাসনিক সব দায়িত্ব সামলানো একজন সহকারী শিক্ষকের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন।
শিক্ষক সমিতির দাবি
রাজশাহী জেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ বলেন,
“২০১০ সালের পর সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে কিছু সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারাও অবসরে চলে যাওয়ায় এখন ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে।”
প্রশাসনের অবস্থান
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার জানান,
“আমরা নিয়মিতভাবে শূন্য পদের তালিকা পাঠাচ্ছি। কিন্তু পদোন্নতি না হওয়ায় সংকট কাটছে না।”
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন,
“সরকার পদোন্নতি বা নিয়োগ না দিলে আমাদের কিছু করার থাকে না। এই অবস্থায়ই চলছে।”
একদিকে শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে প্রশাসনিক জটিলতায় রাজশাহীর প্রাথমিক শিক্ষার মান চরম হুমকির মুখে পড়েছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত পদোন্নতি ও নতুন নিয়োগ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন