নারায়নগঞ্জ জেলা প্রতিবেদক ঃ রুপগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার আবুল বাশার টুকুর বিরুদ্ধে বিগত সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে গুন্ডাবাহেনী তৈরী করে এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, জাল জালিয়াতি করে অন্যের জমি দখল ও অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ বাণিজ্য সহ ত্রাণের মাল লুটপাট ও মামলাবাজের অভিযোগ উঠেছে।
গত ৫ আগস্ট কোটাবিরোধী বৈষম্য ছাত্র-জনতা আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও রয়ে গেছে সারাদেশে তার তৈরি টুকুর মতো গুন্ডা বাহিনী।খন্দকার আবুল বাশার টুকু (৫৫) রুপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমগাঁও এ তার সামরাজ্য , তার পিতার নাম শুকুর মাহমুদ। পান থেকে চুন খসলেই তার হাতে শিকার হতে হয় হামলা -মামলার।আর মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পায়নি এলাকার সর্ব সাধারণ, স্কুল শিক্ষক, ব্যবসায়ী এমন কি তার দলের কর্মীরাও।তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা তো দূরের কথা টু-শব্দ করার সাহস নেই কারো। দু-চারজন যারা প্রতিবাদ করেছে তারাই হেনস্থা ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে ছোটকাল থেকেই টুকু ছিল দুরন্দর ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। কোনরকম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চৌকাঠে পেড়িয়ে তরুণ বয়স থেকেই টুকু শুরু করেছিলেন জাল -জালিয়াতি। জালিয়াতি করেই তার অর্থের হাতেখড়ি।সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারের মালিক আব্দুল মোতালেবের পশ্চিমগাও এর ১২ বিঘা জমি ঢাকার শ্যামপুরের চারতলা বাড়ি কৌশলে ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণনেন।
এই টাকায় আব্দুল মোতালিব সাহেব কে ব্যবহার করে দাউদকান্দি টোল প্লাজার ঠিকাদারী কাজ ভাগিয়ে নেন। তারপর থেকে অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে আব্দুল মোতালেব এর সাথে তার দা -কুমড়া সম্পর্ক গড়ায়। পরে আওয়ামী লীগের এলাকার নেতা আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে সমঝোতা করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ টুকুর আগে পিছে থাকে বিশাল গুন্ডা বাহেনী।তার আপন ভাই খন্দকার মনির ওরফে টুন্ডামনির (৪৫),বগা বিল্লাল (৪৫) ও মজনু (৩২),দাউদ মুক্তার (৪৫), ভাতিজা নয়ন (৪২) ও রাজু ছেলে খোকন (৩১) এ বাহিনী পরিচালনা করেন। মনিরের রয়েছে অস্ত্র ভান্ডার। মনির নোয়াপাড়া চৌধুরী বাড়িতে ডাকাতি করতে যেয়ে অস্ত্রসহ আটক হয়েছিলেন। বিল্লাল, দাউদ গাজা সহ বাসাবোতে র্যাবের হাতে আটক, তাদের বিরুদ্ধে মাদক মামলা চলমান আছে বলে জানা যায়।
গত শুক্রবার ১৬ আগস্ট জুম্মার নামাযের সময় সারা বাংলাদেশ জুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে এবং বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া চাওয়া হয়েছে এবং দোয়া করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় পশ্চিমগাঁও বাইতুল আমান জামে মসজিদে বেগম খালেদা জিয়ার নাম কেটে দেওয়া হয়েছে তার একমাত্র কারন মসজিদের বর্তমান সভাপতি খন্দকার আবুল বাশার টুকু যে কিনা রুপগজ্ঞ উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সিনিয়র সহ সভাপতি ও জেলা আওয়ামীলীগ এর সদস্য এবং তার দোসর (গুন্ডা বাহিনী )টুন্ডা মনির,দাউদা মোক্তার, বগা বিল্লাল, তার ভাতিজা নয়ন তারাও মসজিদে উপস্থিত থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে এই অমানবিক কাজটি করছে।মাস দুয়েক আগেও ৮ নং ওয়ার্ডের বিএনপি সভাপতি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামীলীগ করে না বিধায় তাকে এবং তার লোকজনকে মেরে মসজিদ থেকে বের করে দিছে এবং আওয়ামীলীগ এর লোকজন দিয়ে নতুন কমিটি করছে।এলাকার লোকজন এই টুকু ও টুকুর দোষরদের এই মসজিদ কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য প্রশাসন এর হস্তক্ষেপ কামনা করে এবং তার বিচার করেন।
এর আগে গত চার আগস্ট কোটাবিরোধী ছাত্র জনতা চানপাড়া ব্রীজ বটতলার কাছে আন্দোলনকালে টুকু ও তার বাহিনী ছাত্র জনতার আন্দোলন নস্যাৎ করতে নির্বিচারে হামলা চালায়।
এলাকাবাসী জানান, টুকুর প্রতারণার শিকার এলাকার আপামর জনসাধারণ খেটে খাওয়া গরিব কৃষক ও দিনমজুর। সে তার নিজ এলাকায় সর্বসাধারণকে বৈধ গ্যাস লাইন দেওয়ার কথা বলে ৭০০ থেকে ৮০০ পরিবারের নিকট থেকে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে প্রায় ২৭০কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গ্যাস সংযোগ দেন।পরে সেই টাকা সে বিদেশে পাচার করে। এই প্রতারণার তার গুন্ডাবাহেনী তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছিল।পরে অবৈধ গ্যাস লাইন সরকার বন্ধ করে দিলেও টুকু নিরিহ খেটে খাওয়া দিনমজুর ও সর্বসাধারণের টাকা ফেরত দেয়নি।
কথা হয় হাবিবুর রহমানের সাথে তিনি বলেন গ্যাস লাইনের জন্য আমার পালের গরু বিক্রি করে টুকুকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ছিলাম।
খোরশেদ সাহেব বলেন গ্যাস লাইন নিতে তিনি তার স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে টুকু কে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।অবৈধ গ্যাস লাইন কেটে দিলেও, মুক্তার, সুমনের মত অগনিত লোকের টাকা অদ্যাবধি ফেরত দেয়নি।
এলাকার ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আজগর হোসেন টুকুর বাড়ির পাশে প্লট ক্রয় করে জমিতে ঘর উঠাতে চাইলে তাকে ৬/৭টি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা ঠুকে দেয়।তো অদ্যাবধি এলাকার সাতজন ছেলেকে মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে।
তার প্রতারণার দখল বাজির আরো এক বিস্ময়কর ঘটনাবলী পশ্চিমগাঁও উত্তর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জমি ভুয়া ওয়ারিশ সনদ ও জাল দলিলপত্র বানিয়ে উক্ত জমি প্রভাবশালী বালু খেকোদের নিকট বিক্রি করে।
বিদ্যালয়ের ১০ শতাংশ জমি টুকু তার গুন্ডা বাহেনী দিয়ে দখল নিলে তার প্রতিবাদ করায় মিথ্যা মামলার স্বীকার পশিচমগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। তিনি আরও জানান কয়েক বছর আগে টুকু কৃষি জমিতে বালু ভরাট করতে চাইলে তার প্রতিবাদ করলে আমাকে সহ যারা প্রতিবাদ করছে এলাকার সকলের বিরুদ্ধে গণহারে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।
এলাকাবাসীরা জানান টুকুর মূল কাজ অন্যের জমি দখল করা।আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে বিগত কয়েক বছরে অনেক নিরীহ মানুষের জায়গা জমি দখল করে নিয়েছে। এর মধ্যে একজন ভুক্তভোগী সুমন মিয়া,তার ভাই রিপন ও তার বোন পারুল আক্তারের জমি জোরপুর্বক দখল করে নিয়েগেছে।উল্টো আরো তাদেরকে মামলা হামলার ভয় দেখাচ্ছে।গোটা পশ্চিমগাও টুকু ও তার বাহেনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। আরেক ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম জানান টুকুরর থাবা থেকে আমার সামান্য জমিটুকু বাঁচাতে পারিনি, তার গুন্ডা বাহেনীদিয়ে জোর করে আমার জমি দখল নিয়েছে।
এলাকাবাসী মনে করেন প্রশাসন টুকু ও গুন্ডাবাহিনীর সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করলে এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিষয় টুকু সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন