নিজস্ব প্রতিবেদক | গোপালগঞ্জ |
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শহরে দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার সন্ধ্যা থেকে গোপালগঞ্জ শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাতভর অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী অন্তত ১৪ জনকে আটক করেছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি বলেও জানান তিনি।
কারফিউর কারণে বৃহস্পতিবার সকালেও শহরে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তাঘাট ফাঁকা এবং হাট-বাজারে জনশূন্যতা বিরাজ করছিল। কেউ একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিও ছিল সীমিত। শহরের বিভিন্ন স্থানে টহলের দেখা না মিললেও জেলা কারাগারের সামনে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিলেন।
সহিংসতার সূত্রপাত
বুধবার সকাল থেকে এনসিপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘জুলাই পদযাত্রা’র ধারাবাহিকতায় গোপালগঞ্জে আয়োজন করা হয় ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি। শহরের পৌর পার্ক মাঠে সমাবেশ শুরুর আগেই সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে।
প্রথমে সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ইউএনওর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান ও বিজিবির চার প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়।
সকাল ও দুপুরে শহরের উলপুর ও টেকেরহাট এলাকায় হামলা, ভাঙচুর এবং আগুনের পর পৌর পার্কের সমাবেশ মঞ্চেও হামলা চালানো হয়। কিছুক্ষণ পর কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা দিলে লঞ্চঘাট এলাকায় এনসিপি নেতারা ফের হামলার শিকার হন।
প্রাণহানি ও আহত
এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয় বলে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। আরও ১৫ জন আহত হন, যাদের মধ্যে তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
আতঙ্কের শহর
দিনভর সংঘর্ষ, গুলির শব্দ, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের কারণে গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, শহরজুড়ে নেমে আসে নিস্তব্ধতা।
প্রথমে বিকালে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়, যা পরিস্থিতি শান্ত করতে ব্যর্থ হলে সন্ধ্যার পর জারি করা হয় কারফিউ। রাতভর শহর ছিল প্রায় জনশূন্য। সীমিত কয়েকটি রিকশা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনের চলাচল ছিল না।
মন্তব্য করুন