নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্য ও কারসাজির মাধ্যমে পাওয়া টেন্ডারে কোটি কোটি টাকার কাজ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান মুন্না। মাত্র বিশ বছর আগেও রাজশাহীর সারদা বাজারে তার বাবার ঔষধের ফার্মেসীতে বসতেন। সংসার চালানোর কোন সঙ্গতি ছিলোনা তার।
২০০৫ সালে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে সজীব এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার ফরিদপুরের ঠিকাদার শহীদ কাজ পান মাটি ভরাটের। সেই সময় কাজের সাইড দেখার জন্য মুন্নার বাবা কয়েকজনকে সুপারিশ করে, যেন তার ছেলেকে কাজে রাখেন শহীদ ঠিকাদার। পরবর্তীতে ঠিকাদার শহীদ সাইড দেখাশুনার জন্য মুন্নাকে সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দেন। এভাবে নওগাঁসহ বেশ কয়েকটি জেলার পুলিশের কাজ দেখাশুনা করেন মুন্না। এভাবেই সেই ঠিকাদারের সাথে কাজ করে নিজেই ঠিকাদার বনে যান। এরপর থেকে মুন্নাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পুলিশ লাইন্স্ এর ভেতরে কাজ করার বদৌলতে নারী আর মদ সাপলাই দিয়ে মন জয় করে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার। মুন্না হয়ে যান তাদের চোখের মনি। ঠিকাদারের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে। রাজশাহী জেলা পুলিশ ও রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে নিয়োগ, বদলি বানিজ্যসহ সব ধরনের কাজই হতো মুন্নার ইশারায়। আর তার এসব অবৈধ্য কাজে সব ধরনের সহযোগীতা করতেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর সারদার হেড ক্লার্ক আতিকুর রহমান। আতিক তৎকালীন রাজশাহীর (চারঘাট-বাঘা) আসনের সাংসদ শাহরিয়ার আলমের অনুসারী হওয়ায় তার পিতা সাবেক মেম্বার লোকমানকে করে চারঘাট পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি। মুন্না-আতিক মিলে পুলিশ একাডেমী, জেলা পুলিশ ও পুলিশ লাইন্সসহ বিভিন্ন জেলার পুলিশ ইউনিটে গড়ে তোলেন বিশাল সিন্ডিকেট। কেবল ঠিকাদারী কাজের ভাগই নয় নিয়োগ বাণিজ্য, বদলীসহ বিভিন্ন ধরনের কাজের অংশ নজরানা হিসেবে কতিপয় কর্মকর্তাকে দিয়ে তিনি শত কোটি টাকার মালিক। রাজশাহীর সারদা, রাজশাহী মহানগরী এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। তার ঠিকাদারী কাজের দূণীতির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। ইতিমধ্যে রাজশাহী মহানগর পুলিশের ঠিকাদারী কাজে ব্যাপক দূনীতির অভিযোগ তদন্তকাজ শুরু করেছে একাধিক শক্তিশালী সংস্থা। এই দূনীতির সাথে অনেক রাঘব বোয়াল জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কেবল পুলিশ কর্মকর্তাদের হাত করেই নয়, বিগত ১৭ বছর আওয়ামী মন্ত্রী, এমপি ও জন প্রতিনিধিদের মন জয় করে তিনি আব্দুর রহমান মুন্না তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেছেন। তথাকথিত নির্বাচন এলেই ডাক পড়তো টাকার কুমির মুন্নার। দুই হাতে বিলিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। তৈরী করেন আওয়ামী শিবিরে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সে কারণে ১৬ বছর ধরে পুলিশের অধিকাংশ ঠিকাদারী কাজ পেয়েছেন মুন্না ও তার দোসরদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এদিকে, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর বিগত দিনের টেন্ডারে দূর্ণীতির ব্যাপারে বেশ কয়েকজন ঠিকাদার গুরুত্বর অভিযোগ উপস্থাপন করে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ও বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদার প্রিন্সিপ্যাল বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। অভিযোগে তারা উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর কর্মচারী হেড ক্লার্ক আতিক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসনের ষ্টোনো মনির তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেয়। হেড ক্লার্ক আতিক প্রকাশ্যে বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার যতদিন আছে, এই পুলিশ একাডেমীতে যে প্রিন্সিপ্যাল আসুক আর পুলিশ সুপার আসুক তাদেরকে কিনে নিবে সে। কেউ তার কিচ্ছু করতে পারবে না। টিওসি করার সময় হেড ক্লার্ক আতিক ও ষ্টোনো মনির অন্য ঠিকাদারদের লিগ্যাল কাগজ ছিড়ে ফেলে ও টেন্ডার শিটে রেট বাড়িয়ে দেয় আবার কমিয়ে দেয়। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ১৫ বছর যাবত জান্নাতুল ফেরদাউস, লাবিব এন্টারপ্রাইজ, আব্দুল মতিন, সিমি এন্টারপ্রাইজ, জালাল মোল্লাসহ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ করে আসছে। এছাড়াও ঠিকাদার মুন্নার বিরুদ্ধে আরো গুরুত্বর অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে আবেদনে।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান বলেন, অভিযোগ সমূহ তিনি যোগদান করার আগের। বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। এদিকে এসব তথ্যের ব্যাপারে ঠিকাদার আব্দুর রহমান মুন্নার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব নিউজ না করাই ভালো। আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করব।
মন্তব্য করুন