নিজস্ব প্রতিবেদক :একটি দেশ কতটুকু কৃষি ও শিল্প উন্নত এটা নির্ভর করে সেই দেশে কতটুকু সালফিউরিক এসিড ব্যবহৃত হয়। সালফিউরিক এসিডকে মাদার কেমিক্যাল বলা হয়। এটি একটি রাসায়নিক যৌগ; যা একটি শক্তিশালী খনিজ অ্যাসিড বা অম্ল। কাঠামোগতভাবে এই রাসায়নিক যৌগটির নাম “হাইড্রোজেন সালফেট”। এটির সংকেত H2SO4। সালফিউরিক অ্যাসিড জলে দ্রবণীয়। সালফিউরিক অ্যাসিড পূর্বে ‘অয়েল অফ ভিট্রিয়ল’ নামে অভিহিত ছিল।
সালফিউরিক এসিড সালফিউরিক এসিডের সিংহভাগই রাসায়নিক (Tsp)ফসফেট সার উৎপাদন প্রক্রিয়াতে কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি বিস্ফোরক, অন্যান্য অ্যাসিড, রঞ্জক, আঠা, কাঠের সংরক্ষণকারী এবং গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতেও ব্যবহার খুঁজে পায়। এটি পেট্রোলিয়াম পরিশোধন, ধাতুর আচার, তামা গলানো, ইলেক্ট্রোপ্লেটিং, ধাতুর কাজ এবং রেয়ন এবং ফিল্ম তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। সালফিউরিক এসিড থেকে ফসফরিক এসিড বানানো হয়, যাকে আবার ফসফেট সার, ক্যালসিয়াম ডাইহাইড্রোজেনফসফেট ও অ্যামোনিয়াম ফসফেট বানাতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সালফিউরিক এসিড থেকে অ্যামোনিয়াম সালফেট সারও প্রস্ততেও টি ধাতুর আকরিক থেকে ধাতুকে দ্রবণীয় সালফেট লবণ আকারে অপদ্রব্য থেকে পৃথক করে নিষ্কাশন করতে ব্যবহৃত হয়।এটি কাপড় পরিষ্কারক ডিটারজেন্ট প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়।
এটি কাগজশিল্পে মণ্ড ও কাগজ প্রস্তুত প্রক্রিয়াতে ব্যবহৃত হয়।
এটি মোটরযানে ব্যবহৃত সীসা-এসিড তড়িৎকোষে ব্যবহৃত হয়।এটি অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য যেমন হাইড্রোফ্লোরিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, সালফেট লবণ, রং ও রঞ্জক পদার্থ (যেমন সাদা টাইটেনিয়াম অক্সাইড), বিস্ফোরক পদার্থ, বারুদ, দিয়াশলাই, কীটনাশক ও ঔষধ প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়।এটি খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম পরিশোধন প্রক্রিয়াতে অপদ্রব্য দূর করতে ব্যবহৃত হয়।এটি ধাতুর ইলেকট্রোপ্লেটিং বা গ্যালভানাইজেশন প্রক্রিয়ার আগে ধাতব অক্সাইড দূর করতে ব্যবহৃত হয়।এটি রবারের ভলকানাইজিং প্রক্রিয়াতে ব্যবহৃত হয়।এটি কিছু কিছু রাসায়নিক প্রক্রিয়াতে পানি দূর করতে ব্যবহৃত হয়।
এটি রেয়ন ও নাইট্রোগ্লিসারিনের শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়াতে বিক্রিয়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।এটি আলোকচিত্রগ্রহণ ও মুদ্রণে ব্যবহৃত হাইপো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
আমাদের দেশে সালফিউরিক এসিড কারখানা বিসিআইসি সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন দুটি কারখানা একটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় এবং অন্যটি আশুলিয়ায়।
ব্যক্তি মালিকানাধীন সালফিউরিক এসিড উৎপাদন কারখানা :
১)ওয়াটা কেমিক্যাল লিমিটেড, রূপগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ।
২)সেলবো কেমিক্যাল লিমিটেড, মাওনা,গাজীপুর।
৩)এ এ রসায়ন, বিসিক ফরিদপুর।
৪)ক্রিসেন্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ,পুবাইল,গাজীপুর।
৫)গুডউল বেসিক কেমিক্যাল, কেরানীগঞ্জ।
অত্র প্রতিষ্ঠানের বাজারজাতকরণ এজেন্সি গণ :
১)আসাদ ট্রেডিং, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
২)জাহান কেমিক্যাল
৩)ফ্রেন্ডস কেমিক্যাল
৪)ঝরনা ট্রেডার্স, মুরাদনগর,কুমিল্লা।
৫)এম আর কেমিক্যাল, মুরাদনগর, কুমিল্লা।
৬)রশিদ এন্টার প্রাইজ /হারুন কেমিক্যাল, মুরাদনগর,কুমিল্লা।
সালফিউরিক এসিডের উৎপাদন ব্যয় :
আমাদের দেশে সালফিউরিক এসিডের সরকারিভাবে উৎপাদন ব্যয় প্রতি কেজি ০৮টাকা, ভারতে বাংলা টাকায় ০৩থেকে ০৪ টাকা
,পাকিস্তানের বাংলা টাকায় পাঁচ থেকে ছয় টাকা, চায়নাতে তিন থেকে চার টাকা উৎপাদন ব্যয়।
সারাদেশে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে সালফিউরিক এসিড উৎপাদনের লাইসেন্স দেওয়া হয়। যেখানে সরকারি খরচ ৮ টাকা সেখানে ব্যক্তি মালিকগণ সরকারের কাছ থেকে ৮ টাকার সালফিউরিক এসিড কিনেন ২৭ টাকায়। কারখানার মালিকগণ তাদের নিয়ন্ত্রিত কিছু সংখ্যাক ডিলারদের কাছে বিক্রি করেন ৩৫ টাকায়। উক্ত ডিলারগণ সালফিউরিক এসিড বাজারজাত করেন ৪০ থেকে ২০০ টাকায়। যেন এক মগের মূল্যক।
সালফিউরিক এসিডের আমদানি কারক :
আমাদের দেশের সালফিউরিক এসিডের আমদানি কারক লাইসেন্স দু থেকে তিনজনের থাকলেও অধিক মাত্রায় শুল্ক, সম্পূরক বৃদ্ধি, সিন্ডিকেড সহ নানান জটিলতার কারণে তারা দেশের বাইরে থেকে সালফিউরিক অ্যাসিড আমদানি করতে পারছেন না।
বিষেশজ্ঞদের মতে সালফিউরিক এসিড কারখানার মালিকগণ নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে কারখানা পরিচালনার কারণে কারখানার আশেপাশের জমি ব্যাপকভাবে অনাবাদি হয়ে যাচ্ছে, পরিবেশ ও জলবায়ুর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ওই সকল এলাকার মহিলা শিশু ও জনগণ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ বিষয় বাংলাদেশ কেমিক্যাল এসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর কেমিক্যাল এন্ড পারফিউমারি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ পলাশ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,দেশের কৃষি ও শিল্প বিপ্লবের জন্য সরকারের উচিত সালফিউরিক এসিডের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে আমদানি কারকদের লাইসেন্সের জটিলতা কমিয়ে অবাধে আমদানি সুযোগ করে দেওয়া।
মন্তব্য করুন