মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর বদলগাছীতে সরকারি নিয়ম কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র নারীদের মধ্যে মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণে স্বজনপ্রীতিসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বদলগাছী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃআনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। তথ্য প্রমান সঠিক হলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আহমেদ।
সরকারি চাকুরীজিবি ও ধনীরা ভোগ করছেন এই ভাতা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,সন্তান ও মায়ের পুষ্টিকর খাবারের জন্য প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে তিন বছরে মোট ২৮ হাজার ৮০০ টাকা দেওয়া হয় বলে মহিলা বিষয়ক অফিস সুএে জানা যায় ।
উপজেলার বদলগাছী ইউনিয়নে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত হতদরিদ্র নারীদের মাঝে ভাতার কার্ড বিতরণের জন্য নির্ধারন করা হয়।উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আহমেদের যোগসাজসে প্রকৃত মাতৃত্বকালীন নারীদের মাঝে বিতরন না করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃআনোয়ার হোসেন তার নিজের পছন্দমত নারীদের মাঝে সুবিধা নিয়ে বিতরন করেন। এছাড়াও অন্য ইউনিয়নে বসবাসকারী মহিলাদের নাম তার নিজ ইউনিয়নে অন্তরভুক্ত করে সেখান থেকে সুবিধা ভোগ করেন। যার কারণে এলাকার একাধিক সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নারীদের তিনি বাদ দেন। নাম জানাতে অনিচ্ছুক বদলগাছী ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন,নিজ ইউনিয়নের মাতৃত্বকালীন নারীদের বাদ রেখে তিনি সুবিধার মাধ্যমে অন্য ইউনিয়নের নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা করে দেন।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলা সদর ইউনিয়নের সোহাসা গ্রামের সোনা মিয়ার স্ত্রী কেমি বানু উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে আয়া পদে ( রাজস্ব খাতে) চাকরি করেন, তিনি পাচ্ছেন মাতৃত্বকালীন ভাতা। গাবনা গ্রামের নুর মোহাম্মদ রাজু ফায়ার সার্ভিসে সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী তার স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন ও পাচ্ছেন মাতৃত্বকালীন ভাতা। ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চাংলা গ্রামের আইজুল ইসলামের স্ত্রী পরিচয়ে শারমিন বানু স্থান পেয়েছে চুড়ান্ত তালিকায়! খোজ নিয়ে জানা গেছে চাংলা গ্রামে আইজুল ইসলামের স্ত্রী পরিচয়ে শারমিন বানু নামে কেউ নেই। তবে এহেন তথ্য গোপন রেখে কিভাবে চুড়ান্ত তালিকায় স্থান পায় তা সন্দেহ জনক।
এলাকার স্বচেতন মহলের দাবি চেয়ারম্যানের যাচাই বাছাই করার ক্ষমতা থাকার পরও এতো বড় অনিয়ম কি ভাবে হতে পারে। আরেক সুবিধাভূগী একই ইউপির গোড়শাহী গ্রামের আব্দুল গণির একমাত্র মেয়ে সাইদা পারভীন নিজ নামে রয়েছে জমি, তার স্বামী গোলাম ফারুক নিজ গ্রাম গাবনা গ্রামে প্রায় ৩০-৪০ বিঘা সম্পত্তির অধিপত্যের মালিক। তানজিমা বানু স্বামী তছলিম হোসেন, গ্রাম ভাতসাইল অথচ তানজিমার স্বামীর বাড়ী দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায়। তার আর সি, সি পিলারে ছাদ দেওয়া বাড়ি। নিজ নামীয় ধানী সম্পত্তি রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ বিঘা, ১ বিঘা পরিমান পুকুরও রয়েছে এই দম্পতির, এসেছে তার নাম ও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জননী জানান, তাঁরা খুব গরিব। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। দিনমজুরি কাজ করে সংসার চলে। অথচ আবেদন করেও মাতৃত্বকালীন ভাতা পাননি।
আরেক গৃহবধূ জানান, তাঁর স্বামী দিনমজুর। দুই সন্তানসহ চারজনের সংসার। প্রথম সন্তানের পর দ্বিতীয় সন্তান পেটে এলে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করি। পরে জানতে পারি চুড়ান্ত তালিকায় নাম নেই।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন , মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীদের বাছাইয়ের জন্য একটা কমিটি করে দিয়েছেন। ইউপি পর্যায়ে সেই কমিটির প্রধান হলেন চেয়ারম্যান। তাঁরা বাছাই করে উপজেলায় পাঠান। উপজেলা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্যার। চূড়ান্তভাবে বাছাই করে স্বাক্ষর করেন। সেখানে কোনো অনিয়ম চোখে পড়লে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। সরকারি চাকরি করে এমন পরিবার কে মাতৃত্বকালীন ভাতা সরকারি নীতিমালায় পাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,যদি কেউ পেয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সঠিক ব্যাবস্হা নিব।
বদলগাছী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের কাছে মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণের অনিয়ম বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন তথ্য গোপন করে আবেদন করেছেন।প
মন্তব্য করুন