নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘অসহযোগ আন্দোলন’ ঘিরে সারা দেশে সংঘর্ষ ও সহিংসতায় পুলিশসহ অন্তত ৯৮ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। এ ছাড়া সংঘর্ষ চলাকালীন বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত সংঘর্ষে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নিহতদের মধ্যে নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৮ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২৩ জন, কিশোরগঞ্জে ৫ জন, রাজধানী ঢাকায় ১১ জন, বগুড়ায় ৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ১ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৫ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, শেরপুরে ২জন, জয়পুরহাটে ২ জন, হবিগঞ্জে ১জন, ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ১ জন, সাভারে ১ জন, কক্সবাজারে ১ জন, বরিশালে ১ জন ও গাজীপুরের শ্রীপুরে ১ জনসহ ৯৮ জন নিহত হয়েছেন।
ঢাকা (রাজধানী) :
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং আরেকজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিকাল থেকে টানা চার ঘণ্টা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া ত্রিমুখী সংঘর্ষে বিকাল থেকেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদপুর সংঘর্ষে একজন কিশোর নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে নিহতে সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।নিহত কিশোর হলেন- ওমর ফারুক (১৬)। তিনি মোহাম্মদপুরের বোর্ড ঘাট এলাকার বাসিন্দা।
জিগাতলায় শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩), কাওরানবাজারে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪), ফার্মগেট এলাকায় তৌহিদুল ইসলাম (২২), গুলিস্তানে জহির উদ্দীন (২৬), যাত্রাবাড়ীতে দুই এবং ২৫ বছরের এক অজ্ঞাত যুবক।
নরসিংদী:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ০৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রবিবার দুপুরে মাধবদী বাজার বড় মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মাধবদীর পৌর মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক। তিনি বলেন, ‘নিহত ছয় জনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।’
নিহতরা হলেন চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নওশের (৪০) ও অজ্ঞাত আরও একজন।
সিরাজগঞ্জ:
চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে আন্দোলনকারীদের পুলিশ বাধা দিলে আন্দোলনকারীরা থানায় ঢুকে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, রবিবার বিকালে দুর্বৃত্তরা এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায়। এ সময় থানায় ঢুকে তারা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একই সঙ্গে থানায় দায়িত্বরত ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে। তবে নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ শহরে দুপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় শহরে তিন জন, রায়গঞ্জে সংঘর্ষে ছয় এবং শাহজাদপুরে একজন নিহত হন। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘শহরে সংঘর্ষ চলাকালে মারা যাওয়াদের মধ্যে জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জু রহমান রয়েছেন। বাকি দুই জন হলেন সুমন শেখ (২৮) ও আব্দুল লতিফ (৪২)। তারা যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মী। অপরজনের নাম জানা যায়নি।’ এ ছাড়া সংঘর্ষে নিহত বাকিদের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
মুন্সীগঞ্জ:
মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কাজে যাওয়ার পথে দুই নির্মাণশ্রমিকসহ তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে সাত জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন।
লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুরে প্রয়াত সেই আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসা থেকে চালানো গুলিতে আট জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার তমিজ মার্কেটের পাশে নিজ বাসা থেকে তাহেরপুত্র টিপু ও তার সহযোগীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করেন বলে জানা যায়।
ফেনী:
ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রবিবার বেলা ২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা অসহযোগের সমর্থনে মহিপাল এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। তবে দুপুর ২টার দিকে মহিপাল সেতুর নিচে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষে নিহত আট জনের পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া তিন গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার আসিফ ইকবাল বলেন, ‘এই মুহূর্তে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আট জনের লাশ রয়েছে। তারা সবাই মহিপালে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।’
এ ছাড়া ইটের আঘাতে আহতদের মধ্যে আছেন বাংলা ট্রিবিউন ও বাংলাভিশনের প্রতিনিধি রকিবুল ইসলাম, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন সুলতান মাহমুদ (২৩), জবাবদিহি পত্রিকার সাংবাদিক হাসনাত তুহিন (৪৫), পথচারী সাইফুল ইসলাম ও যুবদল নেতা সাইদুল ইসলাম (৩২)। তারা ছাড়াও আরও পাঁচ জন গুলিবিদ্ধ হন। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
রংপুর:
রংপুর নগরীতে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা, পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হারাধন রায়সহ চার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আট সাংবাদিকসহ শতাধিক। গুরুতর আহত অবস্থায় ৯ জনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত বাকি তিন জন হলেন যুবলীগ কর্মী খসরু, তার বাড়ি রংপুর নগরীর গুড়াতিপাড়ায়, নিহত মাসুমের (৩১) বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া নিহত আরেকজনের নাম-পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসায় আগুন দিলে পুড়ে অঞ্জনা বেগম (৩২) নামে এক নারী ও তার ৭ বছরের কন্যাশিশু মারা গেছে। ওই নেতার বাসার কাছে যুবলীগ নেতা মবিনকেও (৩৮) হাত-পা বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তা ছাড়া সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে রুবেল আব্দুল্লাহ নামে (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
বগুড়া:
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে চার জনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ এবং অপরজনের বিষয় নিশ্চিত করেছেন বেসরকারি স্বদেশ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
কুমিল্লা:
কুমিল্লার দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষের সময় গুলিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত এক যুবকের নাম আব্দুর রাজ্জাক রুবেল (২৬)। তিনি দেবিদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি।
পাশাপাশি সংঘর্ষ চলাকালে ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওই ফাঁড়িতে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খায়রুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মাগুরা :
মাগুরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় গুলিতে চার জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন জেলা ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি (২৬), সদরের রায়নগর গ্রামের ফরহাদ হোসেন (২৩) ও মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া গ্রামের সুমন শেখ। অপরজনের নাম জানা যায়নি। সংঘর্ষে ছাত্র, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।
ভোলা :
ভোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে দুপুরে এক জন নিহত হয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ তাদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে ছাত্রলীগ পিছু হটে। পরে বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
পাবনা:
পাবনায় আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে তিন জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রবিবার দুপুরে শহরের ট্রাফিক মোড়ে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান তিন জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় আরও ৩৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সিলেট:
সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচ জন নিহত হন। সংঘর্ষে পুলিশ বিজিবি ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ৫০ জন আহত হন। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রবিবার দুপুর ২টার দিকে গোলাপগঞ্জের ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে দুই জন হলেন ব্যবসায়ী বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।
শেরপুর:
শেরপুরে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নামা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের টহল গাড়ির চাপায় অনন্ত তিন জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। রবিবার বিকালে শহরের খড়মপুর এলাকার এ নিহতের ঘটনা ঘটে।
জয়পুরহাট:
জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও ছররা গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। হামলা ও সংঘর্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এস এম গালিব আনোয়ার নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বরিশাল :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বরিশাল নগরীর করিম কুটির ও চৌমাথা এলাকা। রবিবার দুপুরে ওই এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হন। নিহত টুটুল চৌধুরী নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
হবিগঞ্জ:
অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হবিগঞ্জে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে রিপন শীল (২৮) নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আন্দোলন চলাকালে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের বাসভবনে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রবিবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শহরের টাউন হল রোডে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিপন শীল অনন্তপুর এলাকার রতন শীলের ছেলে। তিনি শহরের একটি সেলুনে কাজ করতেন।
মন্তব্য করুন