নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে ট্রাংকের ভিতরে তোশক মোড়ানো অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ,চাঞ্চল্যকর এবং ক্লুলেস হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামী মোঃ আল আমিন (২৫) কে গ্রেফতার করেছ র্যাব -১০।
গত ২৩ জুন সকাল ০৮.০০ ঘটিকার সময় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কোন্ডা ইউনিয়নের জাজিরা বোট সংলগ্ন ব্রীজের নিচে একটি বড় ট্রাংক স্থানীয় লোকজন দেখতে পেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে থানায় অবহিত করে। পরবর্তীতে থানা পুলিশ সেখানে আসলে ট্রাংকটি উদ্ধার করে খুললে তোশক দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় একটি অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃতদেহ পায়। ধারণা করা হয়, ২২ জুন আনুমানি রাত ৮.০০ ঘটিকা হইতে ১২.০০ ঘটিকার মধ্যে যেকোন সময় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা উক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করে তাকে তোশক দিয়ে মুড়িয়ে ট্রাংকভর্তি করে বর্ণিত স্থানে ফেলে দিয়ে যায়। র্যাব-১০ এর পাশাপাশি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকায় মর্গে প্রেরণ করেন।
এ সংক্রান্তে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় আইনগত ব্যবস্থা ও উক্ত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্তকরণ প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় র্যাব-১০, ব্যাটালিয়নের অপ্স অফিসার এএসপি এম. জে. সোহেল এর নেতৃত্বাধীন একটি আভিযানিক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সন্দেহভাজন আসামী ও হত্যাকান্ডের কারণ সনাক্তকরণে কাজ শুরু করে। উক্ত আভিযানিক দল সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় কয়েকজন সন্দিগ্ধ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে সমর্থ হয় এবং সন্দিগ্ধদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দ্যেশে অভিযান অব্যাহত রাখে।
পুলিশ ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং নিশ্চিত হয় যে মৃতদেহটি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানাধীন মৃত দেবেন্দ্র হাওলাদারের পুত্র দীপঙ্কর হাওলাদার @ দিপু হাওলাদার @ মোঃ সুমন (৩৪)-এর। পরবর্তিতে ভিকটিমের মা মিনতি হাওলাদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে থানায় হাজির হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-১০ ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে জানতে পারে যে, দীপঙ্কর হাওলাদার @ দিপু হাওলাদার @ মোঃ সুমন (৩৪), আনুমানিক পাঁচ বছর পূর্বে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে মোঃ সুমন নাম দিয়ে সুবর্ণা @ পারভিন’কে ইসলামী শরীয়ত মতে বিয়ে করে। বিয়ের পর হতে বাদীর ছেলে ও তার স্ত্রী আলাদাভাবে বসবাস শুরু করে এবং বাদীর পরিবারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায়। বাদী তার ছেলের স্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পারে যে, আরিফ ও বাবু নামে দুই ব্যক্তির সাথে ভিকটিমের পরিচয় হয় এবং তাদের বাসায় যাতায়াত করত। গত ১৮ জুন দীপঙ্কর হাওলাদার @ দিপু হাওলাদার @ মোঃ সুমন তার দুই বন্ধু আরিফ ও বাবুর সাথে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। অতঃপর ১৯ জুন ভিকটিম তার স্ত্রীর নম্বরে ফোন করে ঢাকায় পৌঁছানোর সংবাদ দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিম সুমনের স্ত্রী তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোন যোগাযোগ করতে পারে নাই।
এরই প্রেক্ষিতে, বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল ইং ০৪ জুলাই ১০:৩০ ঘটিকায় রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন পালপাড় বটতলা এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে সন্দেহভাজন মোঃ আল আমিন (২৫)-কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আল-আমিনের নিকট থেকে জানা যায়, ভিকটিম দীপঙ্কর হাওলাদার @ দিপু হাওলাদার @ মোঃ সুমন (৩৪), আরিফ, বাবু এবং আল-আমিন তারা সবাই পেশায় ট্রাক ড্রাইভার। উক্ত পেশার আড়ালে তারা সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা প্রায় ৭-৮ বছর যাবৎ দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা হতে অবৈধ পন্থায় চোরাচালানের মাধ্যমে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে উক্ত মাদক বহন করে পটুয়াখালী, ঢাকার কেরাণীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করত। মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট এবং টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সুমনের সাথে আল-আমিন, আরিফ ও বাবু বিরোধের সৃষ্টি হয়। উক্ত বিরোধের জের ধরে আল-আমিন, আরিফ ও বাবু সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আল-আমিন, আরিফ ও বাবু সুমনকে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। অতঃপর ঢাকার কেরানীগঞ্জে গ্রেফতারকৃত আল-আমিনের ভাড়া বাসায় নিয়ে গিয়ে রাত আনুমানিক ০৯:০০ থেকে ১১:০০ ঘটিকায় আল-আমিন, আরিফ ও বাবু মিলে ভিকটিম সুমনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর ভিকটিম সুমনের লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যে লাশ তোশক দিয়ে মুড়িয়ে একটি ট্রাংকে ভরে একটি ট্রাকে করে নিয়ে গিয়ে আনুমানিক রাত ২১:০০ ঘটিকায় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন জাজিরা বোটঘাট ব্রীজ সংলগ্ন একটি রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায় এবং উক্ত ঘটনার পর সকল আসামীগণ আত্মগোপনে চলে যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১০ এর সহকারী পুলিশ সুপার এম. জে. সোহেল।
মন্তব্য করুন