নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসার আংশিক মালিকানা ও শেয়ার বিক্রির নামে প্রতারণা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে। তাদের বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামে। অভিযুক্ত সুজিত কুমার মন্ডল ও তার স্ত্রী তৃপ্তি রানী সরকার রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
এ দুই শিক্ষক প্রতারণা করে এলাকার অনেকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। তাদের ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘শোভা নেটওয়ার্ক ক্যাবল ও ওয়াইফাই’। ভুক্তভোগীদের মধ্যে কাজী ইমরান ওরফে ইমন নামের একজন এ দম্পতির বিরুদ্ধে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। আগের দিন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এছাড়া বেলপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেন। তারপরও তিনি এখন পর্যন্ত এ দম্পতিকে দেওয়া ১০ লাখ টাকা আদায় করতে পারেননি।
অভিযোগকারী ইমনের বাড়ি রাজশাহী নগরের দরগাপাড়া মহল্লায়। অভিযোগে তিনি বলেছেন, শিক্ষক সুজিত কুমার মন্ডল ও তার স্ত্রী তৃপ্তি রানী সরকার পারিবারিক ও আর্থিক চাপের কথা বলে ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসার শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। ২৫ শতাংশ মালিকানা দেওয়ার জন্য স্ট্যাম্পে লিখে ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তারা ইমনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেন। কিন্তু গত এক বছরেও ইমনকে তারা কোনো লভ্যাংশ দেননি। এ অবস্থায় ইমন বিনিয়োগের টাকা ফেরত চাইলে শিক্ষক দম্পতি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
ইমন বলেন, ‘আমার কাছ থেকে সরাসরি ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং চুক্তি অনুযায়ী মালিকানা দেন। তবে আমি যখন আমার লোকজন প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ দেওয়ার কাজ শুরু করি, তখন জানতে পারি প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত আগের কর্মচারীরা গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন। কর্মচারীদেরও বেতন বাবদ বিপুল অর্থ পাওনা রয়েছে। আমি কোনো লভ্যাংশ পাইনি। আমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি আমার বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত চাই।’
এর আগে সাইদুর রহমান নামের চারঘাটের আরেক ব্যক্তি প্রতারিত হন এই শিক্ষক দম্পতির কাছে। আলাপচারিতায় জানা যায়, ৬০ লাখ টাকায় তার কাছে ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির পুরোটিই বিক্রির কথা বলেছিলেন ওই শিক্ষক দম্পতি। প্রতিষ্ঠানটি কিনতে তিনি সাড়ে ৯ লাখ টাকা দিয়ে বায়না করেন। পরে তিনি দেখেন, প্রতিষ্ঠানটির মূল্য ৬০ লাখ টাকা হবে না। অল্প কিছু অর্থ আয় হলেও তা চলে যায় কর্মচারীদের বেতনের খাতে। তাছাড়া ওই শিক্ষক দম্পতি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে একাধিক স্থান থেকে টাকা নিয়ে রেখেছেন। এ অবস্থায় তিনি প্রতিষ্ঠান না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে টাকা ফেরত চান। কিন্তু ওই দম্পতি টাকা ফেরত দিতে চাননি। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে মামলা করেন।
এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, এর আগে জহির, মনারুলের কাছ থেকে ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা দেখিয়ে টাকা হাতিয়েছেন শিক্ষক দম্পতি। তারাও টাকার জন্য এখন ঘুরছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার নামে আরিফ নামের এক ব্যক্তির স্ত্রীর কাছ থেকেও ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এই দম্পতির বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের কাছে একাধিক অভিযোগ জমা দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ‘আমার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন কোনো দলিল পাই না, টাকা তো দূরের কথা। একজন নারী হিসেবে আমি খুবই অসহায় বোধ করছি। আমরা প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাই, যাতে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি এ দম্পতিকে আইনের আওতায় আনা যায়।’
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষক সুজিত কুমার মন্ডলকেএ ফোন করা হলে তার স্ত্রী তৃপ্তি রানী সরকার ধরেন। তিনি জানান, তার স্বামী অসুস্থ। অভিযোগের বিষয়ে তৃপ্তি রানী বলেন, ইমনকে তিনি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এখন টাকা দাবি করলে লাভ নেই। আরও অনেকে টাকা পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পরিশোধের সামর্থ্য নেই। যখন সামর্থ্য হবে তখন দেবেন।
মন্তব্য করুন