সামিমা আক্তার:
রাজধানীর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় জমে ওঠে এক উদ্দীপনাময় পরিবেশ। কারও কাঁধে লাল পতাকা, কারও হাতে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড—সবাই এক কণ্ঠে উচ্চারণ করছে: আমার শ্রম, আমার অধিকার। বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নির্মাণ শ্রমিক ফেডারেশনের ডেমরা থানা কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এই বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা। সকাল ৯টায় শুরু হওয়া র্যালিতে অংশ নেন শত শত শ্রমিক। তাদের পদচারণায় ডেমরার রাস্তাগুলো যেন হয়ে ওঠে ন্যায়বিচারের মিছিল।
র্যালিটি স্টাফ কোয়ার্টার থেকে শুরু হয়ে ডেমরা মেইন রোড ঘুরে ফেরত আসে। র্যালির শেষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন ডেমরা থানা কমিটির সভাপতি মো. ইউনুস হাওলাদার এবং সঞ্চালনায় ছিলেন মোঃ আব্দুল মজিদ (মোল্লা)। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি মো. আল আমিন। আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফিরোজ মিয়া, মোঃ শাহীন, মোঃ আব্বাস, মোঃ ইমরান আলী (স্বপন), মোঃ রিপন হোসেন, মোসাঃ রোকেয়া বেগমসহ অনেক নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, দেশের প্রতিটি রাস্তা, ভবন ও অবকাঠামোর পেছনে আমাদের ঘাম ঝরে, অথচ ন্যায্য অধিকার পেতে আজও সংগ্রাম করতে হয়। তারা আরো বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫ লক্ষ নির্মাণ শ্রমিক পরিবার রয়েছে। তারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখলেও এখনও সরকারি সহায়তা ও নীতিগত স্বীকৃতি থেকে অনেকটাই দূরে।
সমাবেশে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের জন্য ১২ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—আহত বা নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ১০-১৫ লাখ টাকা, শ্রমিকদের জন্য পেনশন স্কিম ও রেশন ব্যবস্থা, বার্ষিক ৫২ দিনের সাধারণ ছুটি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং প্রবাসী নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য বাজেট বরাদ্দ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
উল্লেখ্য: ১৮৮৬ সালের ১ মে, শিকাগোর রাস্তায় নেমে এসেছিল লাখো শ্রমিক। তাদের দাবি ছিল—৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম, ৮ ঘণ্টা নিজেদের জন্য। ৪ মে হে মার্কেট স্কয়ারে সেই আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। প্রাণ হারান অনেক শ্রমিক, ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হন ৮ শ্রমিক নেতা। তাদের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে দিনটিকে “আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস” হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশে মে দিবস প্রথম পালিত হয় ১৯৬০ সালে এবং স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এটি জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মন্তব্য করুন